বর্ষা উপযোগী শিশুর পোশাক

বর্ষাকাল মানেই ঝমঝম বৃষ্টি, কাদা এবং স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া। আমাদের কিউটের ডিব্বা বাবুগুলার জন্য এই সময়ে বাড়তি কিছুটা সতর্কতার প্রয়োজন হয়। বর্ষাকালে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং আরামের জন্য সঠিক পোশাক নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। বর্ষার দিনে শিশুরা যাতে বাইরে খেলাধুলা করতে পারে, বৃষ্টির মধ্যেও নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারে, এবং তাদের পোশাক যাতে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার পরও আরামদায়ক থাকে, সেজন্য কিছু টিপস মেনে চলা উচিত।

১. রেইনকোট ও ছাতা:

বর্ষাকালে সবচেয়ে জরুরি জিনিস হলো রেইনকোট ও ছাতা। শিশুরা বৃষ্টির মধ্যে স্কুলে গেলে অবশ্যই রেইনকোট পরিয়ে দিন। বাজারে বিভিন্ন রঙ এবং ডিজাইনের রেইনকোট পাওয়া যায়, যা শিশুদেরও পছন্দ হবে। পাশাপাশি, রঙিন ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের ছাতা ব্যবহার করতে দিন। বর্ষাকালে অনেক সময় এই রোদ এই বৃষ্টির খেলা চলে। তাই শিশুদের জন্য বহন উপযোগী হালকা এবং সহজে ফোল্ডেবল ছাতা ও রেইনকোট ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখুন। তবে একটা ব্যাপার খুব খেয়াল রাখা। রেইনকোটটি যেন সহজে পরিধানযোগ্য হয় এবং ও ছাতাটিও যেন সহজে খোলা ও বন্ধ করা যায়।

২. রাবার বুট:

বর্ষাকালে সাধারণ জুতা পরলে খুব সহজেই ভিজে যায় এবং কাদায় ময়লা হয়ে যায়। এমনকি ছিড়েও যায়, পায়ে পড়তেও কেমন যেন অস্বস্থিকর লাগে। তাই এই সময়ে ওয়াটার প্রুফ রাবার বুট সবচেয়ে উপযোগী। রাবার বুট কাদা ও পানি থেকে পা বাঁচিয়ে রাখে এবং সহজেই পরিষ্কার করা যায়। এছাড়াও শিশুদেরকে ফাংগাল ইনফেকশনের হাত থেক রক্ষা করে।

৩. হালকা ও দ্রুত শুকানো পোশাক:

বর্ষাকালে হালকা ও দ্রুত শুকিয়ে যায় এমন পোশাক পরানো উচিত যা শরীরে্র সাথে লেগে থাকে না এবং ভিজলেও দ্রুত শুকিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে শিশুর জন্য সিল্ক, মিহি জর্জেট, রেয়ন ইত্যাদি পোশাক সবচেয়ে উপযোগী। এই ধরনের পোশাকের তন্তু বাতাস চলাচলে সহায়ক। তাই শিশুরা এগুলো ব্যবহারে বেশ আরাম পায়। আর বৃষ্টিতে ভিজলেও দ্রুত শুকিয়ে যায় বলে আমাদের আদরের শিশুদের সর্দি, ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা কম থাকে। সুতির কাপড় বর্ষাকালে সবচেয়ে আরামদায়ক। তবে কেউ যদি সুতি ব্যবহার করতে চায় সে ক্ষেত্রে মিহি ও পাতলা সুতি ব্যবহার করতে পারে।

৪. ফুলহাতা এবং লম্বা প্যান্ট:

বর্ষাকাল এলেই কিন্ত মশার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। এই সময়ে শিশুদের ঠান্ডা ও মশা থেকে রক্ষা করতে ফুলহাতা জামা এবং লম্বা প্যান্ট পরানো ভালো। এছাড়া, ফুলহাতা ও লম্বা প্যান্ট পরলে শিশুদের শরীরের বেশিরভাগ অংশ ঢাকা থাকে, যা ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

৫. ক্যাপ ও হ্যাট:

বর্ষাকালে বাইরে গেলে শিশুরা যাতে মাথা ভেজা থেকে বাঁচতে পারে, সেজন্য ওয়াটারপ্রুফ ক্যাপ বা হ্যাট পরানো উচিত। এগু্লো বৃষ্টির পানি থেকে মাথা রক্ষা করে এবং ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচায়।

৬. মোজা পরিধান করান:

বর্ষাকালে অনেক সময় ঘরের মেঝে ও ঘরের টেম্পারেচার কিছুটা ঠাণ্ডা থাকে। এই সময়ে শিশুর পায়ের সুরক্ষার জন্য অবশ্যই মোজা পরানো উচিত। সুতির মোজা তাদের পায়ের ত্বককে সুরক্ষিত রাখে এবং ঠান্ডা লাগা থেকে শিশুদের রক্ষা করে। মোজা অবশ্যই শুকনো এবং পরিষ্কার রাখা উচিত। ভেজা মোজা উল্টো ক্ষতির কারন। তাই মোজা ভেজানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা।

৭. এক্সট্রা পোশাক:

শিশুরা বর্ষাকালে বাইরে খেলতে গেলে দ্রুত ভিজে যেতে পারে, তাই সাথে অতিরিক্ত পোশাক রাখুন। এতে ভিজে যাওয়া পোশাক পরিবর্তন করা সহজ হবে এবং শিশুদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে।

৮. ওয়াটারপ্রুফ ব্যাকপ্যাক:

যদি শিশুরা স্কুল বা বাইরে যায়, তাহলে ওয়াটারপ্রুফ ব্যাকপ্যাক ব্যবহার করতে দিন। এটি বই, খাতা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র শুকনো রাখবে।

৯. রং-বেরঙের পোশাক:

বর্ষাকালে শিশুরা যাতে আনন্দে থাকে, সেজন্য রং-বেরঙের পোশাক পরানো যেতে পারে। রঙিন পোশাক শিশুর মন ভালো রাখে এবং বৃষ্টির দিনগুলোকে উজ্জ্বল করে তোলে। শিশুদের উজ্জ্বল রং যেমন – লাল, কমলা, হলুদ, নীল, আকাশি, সবুজ ইত্যাদি রংয়ে বেশ প্রাণবন্ত লাগে।

১০. অ্যান্টি-স্লিপ সোল:

বর্ষাকালে ফ্লোর বা রাস্তা ভিজে থাকে, তাই অ্যান্টি-স্লিপ সোল যুক্ত জুতা ব্যবহার করুন। এতে শিশুরা পিচ্ছিল ফ্লোরে স্লিপ করবে না এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমবে।

বর্ষাকালে শিশুদের আরামদায়ক ও সুরক্ষিত রাখতে সঠিক পোশাক পরানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেইনকোট, ওয়াটারপ্রুফ রাবার বুট, দ্রুত শুকানো পোশাক, এবং অ্যান্টি-স্লিপ জুতা তাদের আরাম ও সুরক্ষা প্রদান করে। এই টিপসগুলি মেনে চললে আপনার শিশু বর্ষাকালে সুস্থ এবং এক্টিভ থাকবে। ভুনা খিচুরির সাথে জমপেশ ভর্তার বর্ষার মজাটা পুরোপুরি উপভোগ করার জন্য এই ধরনের পোশাকগুলো সিলেক্ট করে শিশুদের দিনগুলোকে আরও আনন্দময় এবং আরামদায়ক করে তুলুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *